নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উদ্বোধনের ৫ বছরেও শেষ হয়নি বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও অডিটরিয়ামের নির্মাণ কাজ। প্রকল্প অনুযায়ী ভবন ও অডিটরিয়ামটির নির্মাণ কাজের সময়সীমা ২ বছর বেঁধে দেয়া হলেও ঠিকাদারের অবহেলায় এখনও সম্পূর্ণ হয়নি ভবনের মুক্তমঞ্চ ও মুক্তমঞ্চের দেয়ালের টেরাকোটা, সকল টয়লেট, বিভিন্ন কক্ষের ফ্যান ও এসি লাগানো, ফার্নিচার, লিফট, সিসি ক্যামেরা, থাই গ্লাস ও সভাকক্ষের কাজ। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জান নূর। এরপর ডিভিশনাল এবং জোনাল লিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কার্যাদেশ ৪১/২(৬) অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী ভবন ও অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্প অনুয়ায়ী ৫০০টি আসন, একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, আর্ট গ্যালারি নামে একটি অডিটোরিয়াম সহ প্রকল্পটি বিভাগীয় ও অঞ্চল শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কাজ ২৪ মাসে অর্থ্যাৎ ২ বছরের মধ্যে শেষ করে ২০১৭ সালের জুন মাসে হস্তান্তর করার কথা ছিল।
কিন্তু দফায় দফায় কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। বাকি নির্মাণ কাজ দ্রুত সর্ম্পন্ন করার আশ্বাসে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালের সফরকালে বিভাগের অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে এই শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও অডিটোরিয়াম উদ্বোধন করেন। পরে নির্মাণকাজে ধীরগতি ও স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীদের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর সকালে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেন প্রকল্প কর্মকর্তা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে।
কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেও অদ্যাবধি পর্যন্ত ভবন ও অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজ সহ অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড জানা গেছে, ভবনের মুক্তমঞ্চ ও মুক্তমঞ্চের দেয়ালের টেরাকোটা, সকল টয়লেট, রুমগুলির ফ্যান ও এসি লাগানো, ফার্নিচার, লিফট, সিসি ক্যামেরা, থাই গ্লাস, সভাকক্ষ, মঞ্চের পেছনের এলইডি পর্দা স্থাপন ও সম্পূর্ণভাবে ভবনের রং করার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ছড়ানো ছিঁটানো কাজ সম্পূর্ণ করতে আরো কয়েক মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক কর্মরত মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা৷
প্রকল্পটির ঠিকাদার ইনফিনিটি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, করোনার মহামারির কারণে কিছু কাজের সমস্যা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের বাইরে সাজসজ্জাসহ কিছু বাড়তি কাজ করার জন্য বিলম্বিত হচ্ছে। তবে বাকি নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলেও জানান এই পরিচালক৷ বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ সভাপতি কাজল ঘোষ জানান, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমি। কিন্তু সেই শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কাজের নামে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারের অবহেলায় দুই বছরের নির্মাণ কাজ পাঁচ বছরের শেষ হয়নি। আর কত দিন লাগবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। এতে করে একদিকে সংস্কৃতির চর্চা ব্যাহত হচ্ছে আরেক দিকে সংস্কৃতিকর্মীরা মুজিব বর্ষ পালনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ তাই অসমাপ্ত কাজ দ্রুত শেষ করে একাডেমি ভবন আর অডিটোরিয়ামটি খোলার জোর দাবি জানান তিনি। বরিশালে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, প্রকল্প অনুযায়ী বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও ঠিকাদারকে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে রেখেছে। কাজ গুলো দ্রুত শেষ করার জন্য বারবার বলা হলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজগুলো এখনও শেষ করতে পারেনি।
Leave a Reply